‘ছাঁট মানুষের জাগ’ অমিত আশরাফের সারৎসার
আবু জাফর সৈকত
‘ছাঁট মানুষের জাগ’ অমিত আশরাফের সারৎসার
‘ ছাঁট মানুষের জাগ’ কবি অমিত আশরাফের সূচনা গ্রন্থ। কবিতাগুলোতে তারিখ সংযোজন হওয়াতে কবির বিকাশ সহজেই উপলব্ধি করা যায়। প্রিন্ট পয়েট্রি হতে প্রকাশিত তিন ফর্মার বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ১৫০ টাকা। প্রচ্ছদ মামুন হোসাইন। এতে মোট ৪০টি কবিতা স্থান নিয়েছে। ভাল লাগা একটি কবিতা দিয়ে শুরু করছি। শুরুর কবিতায় কবি নিজের শিকড় খুঁজতে গিয়ে মৎস শিকারি রূপে আবিভর্‚ত হয়েছেন।-
বৃষ্টি ভুল করে যদি এসো এই দেশে
ডিঙ্গিয়ে যেয়ো মাধবীলতার ঝাড়
সে এখন যৌবনের কাঠ।
(মৎস শিকারি ছিলাম, পৃষ্ঠা-৯)
জন্ম: রায়পুরা, নরসিংদী। লেখালেখির সূত্র নারায়ণগঞ্জে। ধাবমান আন্দোলনের সাথে যুক্ত শুরু থেকেই।
বাস্তব সময়ের সাথে বিদ্রোহ করে করেই যেন কবি তার যাত্রা পথ চলতে চান। যেখানে ঈশ^রের সামরিক ক‚টকৌশলেও নিয়তির হাতে ছেড়ে দিতে চান না নিয়তির ছায়ায়। তাই ব্যক্তি চিন্তায় আঁচল ফেলে ইস্তফা দেন পুরনো ডায়েরি। পুণমুদ্রন না হয়ে সংস্কারে বিশ্বাসী কবি এগিয়ে যান। আমজনতার ভাষা প্রকাশে উষ্মা প্রকাশ করেন। সম্পূর্ণ কবিতাটি তুলে ধরছি-
-আহা! আরেকটা ধর্ষণ
-তনুকে মনে আছে?
-ওই যে নাটক করতো
বেহায়া মেয়ে একটা, স্টেজজুরে নাচ দেখাতো
দুধ আর পাছার দুলনিতে, নাউজুবিল্লাহ
ঠিকই আছে চুইদ্দা মারছে
নাস্তিক মাগি একটা
মেয়েটা হিজাব পড়তো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও
-আহা! এমন মেয়েটারে কেমনে মারল
আল্লাহ তারে জান্নাত দিক
-কিছু করার দরকার না
আন্দোলন, মামলা?
-না ভাই আল্লাই বিচার করবো
খানকির পোলারা প্রশাসন মানে না
আমরা কোন চ্যাডের বাল
(আমজনতা, পৃষ্ঠা-২৩)
সত্যিই আমজনতা দ্বৈত সত্ত্বা নিয়ে যাপন করে তার দৈনন্দিন জীবন। একে চ্যাডের বাল বলা যথার্থই।
কবির যাপিত জীবন ক্রমাগত ছুটে চলা। এই ছুঁটে চলতে চলতে বেঁচে থাকতে চান কবি কিন্তু এই লড়াইয়ে কবির অভিজ্ঞতা তাকে শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যায় বার বার। শৈশবের দুলোমাখা পথে তাই তার গণি মাষ্টারের কথা মনে পড়ে-
গণি মাষ্টারের গায়ে আগুন লেগেছে
পেয়াজ, মরিচ, শসা আরো কিছু
লেবু কাটা ঘা।
(শৈশবের ধুলো, পৃষ্ঠা-১২)
অভাব যাতে বাসা না বাঁধতে পারে কবিকে তাই বিকল্প চিন্তা করতে হয়-
আমি এখন দক্ষ শিকারি
চোখ পলান্তি খেলতে খেলতে কখন যে
চুরি হয়েছে প্রাণান্ত তৃষ্ণা
তার বুকে পালক ছড়িয়ে পান কৌড়ি, কাকতাড়–য়া, ইস্টিকুটুম
এরা আমার জাত ভাই
(চোখ পলান্তি, পৃষ্ঠা-৪২)
কবি মুলত সমাজের দর্পন। সমাজের যত অসঙ্গতি, অন্যায়-অবিচার কবি-শিল্পীদের ভাবনায় উঠে আসে বার বার। প্রতিবাদের ভাষা সৃষ্টি করে কবিতা।
ঈশ^র গায় ঘুম পাড়ানিয়া গান
ঘুমাও, ঘুমাও বাছা
ঘু-ও-ম
(তবুও নষ্ট বীজের মতো অবনত, পৃষ্ঠা-১৭)
আসুন, বিক্রি হতে পারেন
আপনি, আত্মা অথবা যুগ তেকে যুগলবন্ধন
(অথবা শুনুন, পৃ-২২)
লাশ জাগেনি, লাশ জাগে না
সাদা পোকাটিও না, ঘুণটিও না
মাটির ফ্রেমে বন্দী
যুগস্মৃতি
(সাদা পোকাটিও না ঘুণটিতে না, পৃষ্ঠা-৩৩)
কবিতায় নারী শব্দের আগমন বহুবার। শেষ কবিতাটি উল্লেখ না করে পারছি না-
শহরের ভাঁজ খুলে এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যটা
নারীরা খোঁপা খুলে বেরিয়ে আসবে
চুমো খাবে সেলাই করা বক্ষে
(উৎসব দেখি শান্তির, পৃষ্ঠা-৪৮)
নিজস্ব ভাষা সৃষ্টি না করতে পারলেও বক্তব্যে কোন চতুরতা নেই। সহজ কথাকে সহজেই বলেছেন কবি।
আরো একটি ভাল লাগা কবিতা দিয়ে লেখাটি শেষ করছি।
লোকে বলে আমি নাকি মানুষ আছি
খাই-দাই যৌন তাড়নায় ভালোবাসি
যে আগুনে উনুন জ¦লে বুকের ভেতর
তার বাহ্যিকতায় মানুষ পোড়ে
দেখে দেখে ঠায় দাঁড়িয়ে পড়ি দেয়াল ঘেষে।
লোকে বলে আমি নাকি মানুষ আছি...
(আমি নাকি মানুষ আছি, পৃষ্ঠা-২৯)
ছাঁট মানুষের জাগ মূলত কবির কবি জীবন শুরু হওয়ার পর ভাবনার সারৎসার। বিভিন্ন সময়ের অনুভ‚তিগুলো খুঁজে পাওয়া যাবে এ গ্রন্থে, কবি যা সরল চোখে দেখেছেন, উপস্থাপন করেছেন তার কবিতার ক্যানভাসে। কবির এই কথামালা পরবর্তীতে কবিকে কাজ ও ভাবনাকে বুঝতে সাহায্য করব্ তবে কবিতা বাছাইয়ে কবিকে আরো বেশি সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। কবি অমিত আশরাফের শুভকামনা করছি।
No comments